১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয় লাভ করলেও স্বাধীনতার বীজ বপন হয়েছিল অনেক আগেই। ‘বায়ান্নর’ ভাষা আন্দোলনে বাঙালি যখন মাতৃভাষা রক্ষার্থে মরতে শিখেছিল তখনই সেই বীজ সবার হৃদয়ে অঙ্কুরিত হয়েছিল। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে ৭ই মার্চে অগ্নিঝরা বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। তাঁর একটি তর্জনীর বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বরের আহ্বানে, সাড়ে সাত কোটি বাঙালি স্বাধীনতার জন্য জেগে উঠেছিলেন । নবীন, প্রবীণ, ছাত্র, শিক্ষক, সাংবাদিক, কৃষক, জেলে, কামার সহ সর্বস্তরের মানুষ অস্ত্র হাতে তুলে নেয়। ২৫ শে মার্চ কাল রাতে পাক বাহিনীর সহিংস নির্যাতনের স্বীকার হয় বাঙালি। ২৬ শে মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষনা দেন। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের তাজা তপ্ত রক্ত এবং ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে স্বাধীনতার সূর্য উদিত হয়। হানাদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জিত হয়। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে তাই এ দিনটি ‘বিজয় দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। আমরা পেয়েছি লাল-সবুজের একটি পতাকা ও স্বাধীন বাংলাদেশ। দীপ্তিময়, প্রসন্ন, আলোকিত বিজয় দিবস মানেই বাঙালির নবজন্ম। বর্বর পাকিস্তানি হানাদার সেনাবাহিনী আর তাদের এ দেশীয় দোসর, রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করার দিন। জাতি হিসেবে বাঙালির সহস্র বছরের সাধনা শেষে অর্জিত চূড়ান্ত ফলাফলের দিন। বিশ্বে স্বাধীন জাতি হিসেবে বাঙালির মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার দিন। এভাবেই গৌরব, ঐতিহ্য ও সংগ্রামে অতিবাহিত হচ্ছে স্বাধীনতার ৫২ বছর। কিন্তু জাতি হিসেবে শহীদের মর্যাদা আমরা কতটুকু দিতে পেরেছি? দেশকে কয়জনই’বা ভালোবাসতে পারছি? জাতি হিসেবে আমাদের বয়স অল্প, তুলনামূলকভাবে আমরা এ প্রজন্মের তরুণ। তাই ১৯৭১ সালে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী লড়াই-সংগ্রাম মুক্তিযুদ্ধ আমাদের দেখার সৌভাগ্য হয়নি। কিন্তু বিজয়ের ৫২ বছরে আমরা যুদ্ধ না দেখলেও বিজয়ের স্বাদ গ্রহণ করেছি। যুদ্ধের সেই রোমহর্ষক ইতিহাস আমরা জেনেছি, শুনেছি এবং অন্তরে উপলব্ধি করতে পেরেছি। বিজয়ের স্বাদ পেয়েছি- গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য, সাফল্য ও অভাবনীয় উন্নয়নের স্বাদে। কিন্তু নির্মম হলেও সত্য যে, স্বাধীনতার এত বছরেও আমরা স্বাধীনতার চেতনায় নিজেদেরকে সত্যিকারের দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারিনি। আজও অনেকেই জানেন না, মুক্তিযুদ্ধ-স্বাধীনতা-বিজয় কি? ভুলভ্রান্তি করে থাকেন স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস নিয়ে। এখনো এ দেশের আনাচেকানাচে বিচরণ করছে স্বাধীনতা বিরোধী কিছু ষড়যন্ত্রকারী। যারা এ দেশের মুক্তি, দেশের স্বাধীনতা তখনো চায়নি, এখনো চায় না। এখনো দেশের মাটিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে পাকিস্তানির দালাল, রাজকাররা। আজও কিছু অপশক্তি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আঘাত আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সমাজে ভদ্রতার মুখোশ পরিধান করে রক্তে মাংসে মিশে আছেন তারা। রাজাকারদের বিচার হচ্ছে এবং শেষ পর্যান্ত হবে। তাদের বাংলার মাটিতে ফাঁসির বিজয় এ প্রজন্ম দেখেছে। তাই নতুন প্রজন্ম হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে না পারলেও দেশের বর্তমান উন্নয়ন ও সঠিক পথে পরিচালিত করতে অপশক্তি রুখে দিয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে। তরুণ প্রজন্মের এটাই চ্যালেঞ্জ এটাই বড় যুদ্ধ। যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। এ যুদ্ধ অপশক্তি, দালাল, রাজাকার, দেশ বিরোধীদের বিতাড়িত করার যুদ্ধ। বিজয়ের মাস আমাদের ত্যাগ করতে শেখায়, অধিকার আদায় করতে শেখায়। আমরা অদম্য জাতি হিসেবে বিজয় ছিনিয়ে আনতে পেরেছি এবং আত্মোৎসর্গও করতে শিখেছি। এই মাস আমাদের শিক্ষা দেয় সত্য ও ন্যায়ের পথে প্রচেষ্টা থাকলে একদিন জয় আসেই। বঙ্গবন্ধুর আর্দশে দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা’র স্বপ্ন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে আমাদের সবাইকে বিজয়ের ঐতিহাসিক চেতনা বুকে ধারণ করতে হবে। যাঁদের সাহস, আত্মত্যাগের ফলে একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি তাঁদের হৃদয়ে লালন করতে হবে। আমরা যেন আমাদের বিজয়ের ইতিহাস ভুলে না যাই। ত্রিশ লাখ শহীদের তাজা রক্ত ও শস্য শ্যামলার প্রতীক লাল-সবুজের পতাকার মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে পারি। তরুণ প্রজন্ম তথা আগামি প্রজন্মের হৃদয়ে সঠিক ইতিহাস গেঁথে দিতে হবে। যেন কোনো অপশক্তির কালো ছায়া আমাদের চেতনাকে গ্রাস করতে না পারে। বিজয়ের চেতনাকে উজ্জীবিত রেখে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ, তথা শেখ হাসিনা’র স্মার্ট বাংলাদেশ গড়াই আমাদের তীব্র অঙ্গীকার।

লেখক: জি.বি.এম রুবেল আহম্মেদ

(সম্পাদক) খরকা নিউজ মাদারগঞ্জ, জামালপুর।

মোবাইল: 01965473754

ই-মেইল- rubellahmmed1998@gmail.com